জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১) নিহতের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তার লেখা শেষ স্ট্যাটাস।
শনিবার বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাসটি পোস্ট করেছিলেন আবরার। সেই স্ট্যাটাসে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেছিলেন তিনি।
পাঠকদের জন্য আবরারের শেষ স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘‘১. ৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড় লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।
৩. কয়েক বছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’’
আবরারের এই পোস্টের নিচে কমেন্ট করে তার বন্ধুরা সহমর্মিতা জানাচ্ছেন। ইশতিয়াক খান কাব্য নামে একজন লিখেছেন, ‘খুব কাছের সিনিয়র ছিল, অমায়িক মানুষ ছিল। একই স্কুল, একই কলেজের সিনিয়র ছিল মানুষটা। এখনো মাথা কাজ করছে না নিউজটার জন্য। একটা লজিকাল ক্রিটিসিজমও এই দেশে অপরাধ।’
মঞ্জুরুল ইসলাম হৃদয় নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘কখনো ভাবি নাই এই পোস্টে স্যাড রিঅ্যাক্ট দেবো! আর এভাবে চলে যাবি, আর কখনো হুজুর বলে কেউ খ্যাপাবে না। আল্লাহ যেন তোকে জান্নাতের সবুজ পাখিদের কাতারে নিয়ে নেয়!’
মঞ্জুর এলাহী সৌরভ নামে একজন লিখেছেন, ‘নটরডেমে দেড় বছর একসাথে ক্লাস করেছিলাম। পরপারে ভালো থাকিস ভাই, আল্লাহ জান্নাত নসীব করুক, আঙ্কেল আন্টিকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিক!’
মোস্তাফিজার রহমান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘বলেছিলে একসাথে খুলনা যাবে। প্রতি ঈদে কুষ্টিয়া এসে ফোন দিয়ে বলতে, সাঁতার শেখাও, বাইকটাও সেই সাথে শেখায়ো। কথাগুলো সব যে এইভাবে স্মৃতি হয়ে থাকবে ভাবি নাই কখনো। ভালো থেক ওপারে।’
উল্লেখ্য, রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আবরারের সহপাঠীদের অভিযোগ, রোববার রাত আটটার দিকে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত ২টা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা, ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পি*টিয়ে হ*ত্যা করা হয়।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।