মোহাম্মদ আল আমিন : বাংলাদেশের দাবা খেলায় জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে রয়েছে যে তিনজন তারা হলেন নিয়াজ মোর্শেদ, রানী হামিদ ও জিয়াউর রহমান। এরমধ্যে প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার খ্যাত নিয়াজ মোর্শেদ ১৯৬৬ সালের ১৩ই মে জন্মগ্রহণ করেন ঢাকায়। মাত্র ৯ বছর বয়সেই প্রাথমিক ভাবে ঘরোয়া দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন তিনি এবং ১২ বছর বয়সে তাকে বাংলাদেশের একজন সেরা দাবা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বড় ভাইয়ের হাত ধরে দাবা খেলায় পথচলা শুরু হয় নিয়াজ মোরশেদের। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর পর চারবার চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এই চারটি বছর মোরশেদ একাই দ্বৈরথ চালিয়ে যান বাংলাদেশ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায়।
মাঝে ৩০টি বছর ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে ব্যর্থ হয় নিয়াজ মোরশেদ। তবে ২০১২ সালে বাংলাদেশে দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার কীর্তি গড়েন তিনি।
এইখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় নিয়াজ মোরশেদ একমাত্র দাবা খেলোয়াড় যাকে প্রথম দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার উপাধি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায় তার যতো কীর্তি রয়েছে তা ছিলো অনেক প্রশংসনীয়। আন্তর্জাতিক দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় তার পদচারণ হয় ১৯৭৯ সালে। সে বছর টুর্নামেন্টটি হয়েছিলো কলকাতায়। সেখানে ব্যর্থ হয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণ করতে।
তবে ১৯৮১ সালে শারজাহতে হওয়া জোনাল টুর্নামেন্টে মোরশেদ তার প্রভাব দেখাতে শুরু করেন দাবা খেলায়। সেখানে নিজেকে প্রমাণ করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার লাভ করেন তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নিজেকে। একই বছর আরব আমিরাতে প্রথমবারের মতো দাবায় আন্তর্জাতিক মাস্টার উপাধি উপার্জন করেন তিনি।
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ১৯৮৪ সালে দাবায় গ্র্যান্ড মাস্টার নর্ম উপাধি অর্জন করে ফেলেন নিয়াজ মোরশেদ। তিনি ১৯৮৩ এবং ১৯৮৪ সালে বেশ কিছু টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকেন। যার প্রেক্ষাপটে তাকে প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড মাস্টার নর্ম উপাধি দেওয়া হয়ে থাকে।
তার চ্যাম্পিয়ন হওয়া অর্জিত টুর্নামেন্টগুলো ছিলো, ১৯৮৩তে ইয়ুগোস্লাভিয়া ও ওয়াকহাম স্কুল ইয়ুথ টুর্নামেন্ট এবং ১৯৮৪ সালে নোভাগ কমনওয়েলথ ও হংকং চেস টুর্নামেন্টে।
নিয়াজ মোরশেদ তার দাবা খেলায় এতোটাই দক্ষ এবং সুক্ষ ছিলো যে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় হওয়া ক্যাপ্সটেইন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও তিনি বিজয়ী হন। শুধু তাই নয়, ১৯৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কলকাতা গ্র্যান্ড মাস্টার প্রতিযোগিতাতেও তার বুদ্ধিমত্তাকে হার মানাতে পারেনি কেও। চ্যাম্পিয়ন হন সেখানেও।
পর পর দুবছর তার এমন সাফল্যে দ্বিতীয়বারের মতো আবারও দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং ১৯৮৭ সালে দাবা ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়াজ মোরশেদকে গ্র্যান্ডমাস্টার উপাধিটি দিয়ে দেয়। নিয়াজ মোরশেদ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কোন দাবা খেলোয়াড়, যে দাবা ফেডারেশন থেকে এমন উপাধি পেয়ে থাকে।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ব্যাক্তি জীবনে বাংলাদেশি ঘরোয়া দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি দাবায় প্রথম আন্তর্জাতিক মাস্টার উপাধি পান ১৯৯৩ সালে। তবে গ্র্যান্ড মাস্টার উপাধি পেতে অপেক্ষা করতে হয় বেশ কয়েকবছর।
অন্যদিকে দেশের আরেক জনপ্রিয় দাবা খেলোয়াড় সৈয়দা জসিমুন্নেছা খাতুন (রানী হামিদ) ১৯৪৪ সালে সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। দাবা খেলায় নিয়াজ মোরশেদ ও জিয়াউর রহমান থেকে কোন অংশেই কম ছিলেন না তিনিও। উপার্জন হিসেবে তার ঝুলিতে আছে ১৯টি শিরোপা। শুধু তাই নয়। রানী হামিদ একমাত্র নারী খেলোয়াড় যিনি দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে টানা ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হন (১৯৭৯-৮৪)। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক দাবা খেলায় ব্রিটিশ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তিনবার (১৯৮৩, ৮৫ এবং ৮৯)। তার ব্যাক্তিগত জীবনের সবচেয়ে বড় উপার্জনটি ছিলো, দাবা ফেডারেশন থেকে ১৯৮৫ সালে ‘ওমেন্স ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার’ উপাধি পেয়ে থাকেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।