জুমবাংলা ডেস্ক : যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের গডফাদারদের তালিকা র্যাবের হাতে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, সর্বশেষ এনামুল হক আরমান এবং সম্রাটকে গ্রেফতারের পর শাসকদলের ক্ষমতাধর যে কজন নেতার নাম উঠে এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সম্রাটের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় অ*স্ত্র ও মা*দক আইনে দুটি মামলা করেছে র্যাব। এ ছাড়া গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে মা*দক ও মানি লন্ডারিং আইনের পৃথক দুই মামলায় তৃতীয় দফায় সাত দিন এবং যুবলীগের (বহিষ্কৃত) নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমকে গুলশান থানার মানি লন্ডারিং আইনে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বর্তমানে তারা সিআইডির হেফাজতে।
গ্রেফতারকৃতদের গডফাদারদের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এই সিন্ডিকেটে সম্রাটের পেছনের গডফাদার ও মদদদাতাদের খোঁজা হবে। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসবে তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার বলেন, সম্রাটের অবৈধ অর্থের উৎস কোথায়, ক্যাসিনোর টাকা কোথাও না কোথাও একত্রিত হতো! তা কোথায় যেত, দেশের বাইরের অর্থ পাচার হতো কিনা তা খোঁজা হবে। আমরা খুব অল্প সময় সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাকে পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পেলে এসব জানার চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় রিমান্ড চাওয়া হবে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতারের পর খালেদ এবং জি কে শামীম অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ৫টি নামই দফায় দফায় উঠে আসছে। এই ৫ জনই ওই সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। বিনিময়ে তাদের কাছে নিয়মিত পৌঁছে যেত মোটা অঙ্কের অর্থ। অনেক সময়ই তাদের অর্থ পৌঁছে দেওয়া হতো বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে দেশের সবকটি বিমান, স্থল এবং সমুদ্রবন্দরে। তলব হয়েছে তার ব্যাংক হিসাব। এক সাংসদ দম্পতির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসা নামগুলোর গতিবিধির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সম্রাটের প্রশ্রয়দাতাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, তার পেছনে মূল হোতা বা গডফাদারদের খোঁজা হচ্ছে। যেই হোক না কেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে এখনই তা বলার সময় আসেনি। আমরা সম্রাটকে রিমান্ডে চাইব। রিমান্ড পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারা তার মদদদাতা, আশ্রয়দাতা তা বের করার চেষ্টা করা হবে। তিনি আরও বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানটি শুরু করে র্যাব। এরই মধ্যে ১৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত কিছু নাম ও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। গতকাল (রবিবার) সম্রাটকে গ্রেফতার করেছি, তার ছয় মাসের জেল হয়েছে। এখন আলোচনা হচ্ছে, তার কে কে গডফাদার, কারা তার মদদদাতা।
সম্রাটের বিরুদ্ধে দুই মামলা : রমনা থানায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অ*স্ত্র ও মা*দক আইনে দুই মামলা করেছে র্যাব। অ*স্ত্র ও মা*দক মামলার বাদী ডিএডি মো. আবদুল খালেক। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান। এর আগে গত রবিবার ভোরে সম্রাট ও তার এক সহযোগী যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডির হেফাজতে খালেদ-জি কে শামীম : মানি লন্ডারিং মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। গতকাল মা*দক ও মানি লন্ডারিং আইনে সিআইডির ১০ দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর আহসান চৌধুরী। মতিঝিল থানায় দায়ের করা মা*দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম আকন্দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম কনক বড়ুয়া তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ২ অক্টোবর মানি লন্ডারিং মামলায় জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল।
কারাগারে বিষন্ন সম্রাট : কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই সম্রাট বিষণœ সময় পার করছেন। প্রথম রাত আমদানি সেলে নির্ঘুম কাটিয়েছেন। তবে গতকাল সকালে তাকে নেওয়া হয়েছে সূর্যমুখী সেলে। খেয়েছেন স্বাভাবিক খাবার। সম্রাটকে দেখতে কারাগারের সামনে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে তার পরিবারের সদস্য কাউকে কারাগারে আসতে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারারক্ষী জানান, গতকাল সকালে সম্রাটকে সকালের নাশতা দেওয়া হয়েছে দুটি রুটি ও ভাজি। দুপুরের খাবারে ছিল ভাত, গরুর মাংস ও ডাল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম বলেন, সম্রাট সাধারণ বন্দী হিসেবে কারাগারে রয়েছেন। তিনি সুস্থ আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কাল রিমান্ডের শুনানি: রাজধানীর রমনা থানার অ*স্ত্র ও মা*দক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে আগামীকাল ২০ দিন রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমান আরা এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা ও রিমান্ড শুনানির জন্য আবেদন করেন।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।