গর্ভকালীন সময়টা এমন একটি সময়,যখন বেশ কিছু অচেনা সমস্যা বা যে সমস্যাগুলো আপনি আগে তেমন উপলব্ধি করেননি তা গর্ভকালীন সময়ে বেড়ে যায়।এমন একটি সমস্যা হল গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। যা,একজন হবু মায়ের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সুতরাং,আজ থাকবে গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বিষয়ে কিছু পরামর্শ।
গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের কারণ
গর্ভাবস্থায় প্রচুর গ্যাস তৈরি হবার অন্যতম প্রধান কারণ হল প্রোজেস্ট্রেরন হরমোন। গর্ভকালীন সময়ে এই হরমোন বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়।এই হরমোনটি আপনার পাচনতন্ত্র এবং পুরো শরীর জুড়ে পেশিকে শিথিল করে।এই শিথিল পেশি গুলো হজম শক্তি হ্রাস করে। ফলে,যখনই বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তখনই গ্যাস,পেট পেট ফাঁপা,ঢেঁকুর ওঠা সহ অন্ত্রে নানারকম খারাপ অনুভূতি সৃষ্টি করে। সাধারণ অবস্থায় একজন মানুষ ডজন খানেক গ্যাস পাস করে থাকেন। তবে,একজন গর্ভবতী মা অধিকাংশ সময় পেটের গ্যাস পাস করতে পারেন না।ফলে,গর্ভবতী মায়েদের জন্য গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একটি ভোগান্তির নাম।
গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে যে খাবার গুলো সীমিত পরিমানে গ্রহণ করা উচিত
গর্ভকালীন সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়।তবে কিছু খাবার থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।আর এই ধরণের খাবার গুলো গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।তাই, বেশ কিছু খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান হওয়া উচিত :
– কিছু শাকসবজিতে যেমন: ফুলকপি,পাতাকপি,ব্রকলি,ব্রাসেল স্প্রাউটসে র্যাফিনোজ নামক সুগার থাকে যা স্বাভাবিকভাবে গ্যাস সৃষ্টি করে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি তাদের উচিত এই সবজিগুলো একেবারে কম পরিমাণে গ্রহণ করা অথবা বাদ দেয়া।
– যেসব ফল বা খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে যেমন: মধু,ড্রাই ফ্রুটস,ক্যান টমাটো,আর্টিকোচ,কেচাপ,আপেল,আতা এই এই ধরণের খাবার গুলো খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
এছাড়া, কর্ন সিরাপ(যা ফ্রুক্টোজের একটি ফর্ম এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহার করা হয়) এই ধরণের খাবারগুলো খেলেও পেট ফুলে যাওয়ার মত অস্বস্তি লাগতে পারে। ভাল হয় এই খাবার গুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। বিশেষ করে, বাইরে থেকে কোন প্যাকেটজাত খাবার কিনলে ফুড লেভেল পড়ে নেয়া উচিত।
– কিছু উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন: গমের তৈরি খাবার,ওটস ব্রান, সিম বা মটর দানা এই খাবার গুলো সাধারনত বৃহদ্রান্ত ভেঙ্গে যায় এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।তাই,অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে,রুটি বা ওটসের পরিবর্তে ভাত,চিড়া বা মুড়ি খাওয়া ভাল।
– যেসব খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
– দুধ খেলে যাদের সমস্যা হয় তাদের ল্যাক্টোজ ফ্রি মিল্ক খাওয়া উচিত।
গর্ভকালীন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে যে কাজ গুলো করবে
– গর্ভকালীন সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিকুইড জাতীয় খাবার খেতে হবে।বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশিঅন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় ডাবের পানি,লাচ্ছি বা মাঠা বা গ্রীন টি রাখতে পারেন।সারাদিনে,অন্তত ৮-১০ গ্লাস লিকুইড পান করুন।
– পানি পান করার সময় দাড়িয়ে বা বোতলে করে পানি পান করবেন না।ভালভাবে বসে মগ বা গ্লাসে করে পান করুন।
– খাবার গ্রহণ করার মাঝে পানি পান না করে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
– খাওয়ার সময় এক বারে অনেক বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খাবার খেতে পারেন।
-খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে এবং খুব ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।বড় মিল গুলো অন্তত ২০ মিনিট ধরে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
– খাবার খাওয়ার সময় অন্যকোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না।খাওয়ার প্রতি মনোযোগ দিন।
-কৃত্রিম চিনি বা সরবিটল দিয়ে তৈরি যেকোন খাবার খাবার পরিহার করুন।
-হার্ড ক্যান্ডি বা চুইংগাম চিবানোর অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করুন।
-গর্ভধারনের আগে থেকেই যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তবে তার চিকিৎসা করা উচিত।
-নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
-অনেকেই,গর্ভকালীন সময়ে সব ধরণের স্বাভাবিক কাজ কর্ম বন্ধ করে দেন।তবে,হেলদি প্রেগ্নেন্সির জন্য প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্রিস্ক ওয়াকিং বা ইয়োগা করা উচিত।এতে যেমন সুস্থ থাকা যায়।মেটাবলিজম বাড়ে এবং গ্যাসের সমস্যা ও কমে।
-গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন ৩-৪ টি কাঁচা আমলকী লবণ ছাড়া খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক খানি কম থাকবে।
– খাবার ১ চা চামচ কিছুটা মৌরি দানা বা মিষ্টি জিরা চিবিয়ে খেতে পারেন।
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত কোন ধরণের গ্যাস্ট্রিকের মেডিসিন খাবেন না।
লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।