বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, আবরারকে হত্যার আগে ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা তাঁকে শায়েস্তা করার জন্য মিটিং করেন।
ওই মিটিংয়ে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রবিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তানভীর।
রিমান্ড শেষে গতকাল তানভীরকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ জোনাল টিম, গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি তানভীরের জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ছয় আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির অনুরূপ জবানবন্দি দিয়ে তানভীরও ভয়ংকর এই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। তানভীর অন্যান্য আসামির সঙ্গে আবরারকে তাঁর নিজের কক্ষ থেকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনেন। তার আগে তিনি মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মোজাহিদুর রহমান, অনিক সরকার, মনিরুজ্জামান মনিরসহ মিটিং করে আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাত ৮টার দিকে আবরারকে ডেকে আনা হয়।
তানভীর আদালতকে আরো জানান, আবরারের সঙ্গে তাঁর মোবাইল ও ল্যাপটপ আনা হয়। এ সময় তাঁর ল্যাপটপ থেকে ই-মেইল চেক করে শিবিরের অনেক তথ্য পান। রবিন, সকাল ও অন্যরা শিবিরের সঙ্গে আবরারের সম্পর্কের কথা বলে ঘটনাস্থলের সবাইকে উত্তেজিত করেন। এরপর তাঁকে দফায় দফায় ক্রিকেট স্টাম্প, স্কিপিং দড়ি দিয়ে পেটানো হয়। কিল ঘুষিও মারা হয়। এলোপাতাড়িভাবে মারতে মারতে রাত ২টার দিকে আবরার মারা যান। পরে চিকিৎসক ডাকা, পুলিশ ডাকার বিষয়েও আদালতকে বলেন তানভীর।
অমিত ও রাফাত কারাগারে : দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা অমিত সাহা ও শামসুল আরেফিন রাফাতকে আদালতে হাজির করা হয় গতকাল। ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রিমান্ড শেষে দুজনকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এরপর আবরারকে হলের সিঁড়িতে ফেলে যান হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় অমিত ও রাফাত সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। পরদিন আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জন এবং সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তানভীরসহ সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এর আগে যাঁরা জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁরা হলেন ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মো. মোজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন ও মনিরুজ্জামান মনির।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আবরার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামি মো. জিসান, মো. মোর্শেদ ও মো. তানিমকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।