আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহাকাব্যে বর্ণিত রামজন্মভূমিতে বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিনশ বছর টানাপড়েন তেমন ছিল না। মুঘল আমল শেষে ভারতে ব্রিটিশ রাজ প্রতিষ্ঠা পেতেই আইনি লড়াই শুরু হয়ে যায়। সেই ঘটনার প্রায় একশ ৩৪ বছর পর ভারতের প্রধান বিচারপতি বললেন, অনেক হয়েছে, আর নয়, আজই শেষ করতে হবে অযোধ্যা মামলার সওয়াল-জবাব।
বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমি কার হাতে যাবে তা জানা যাবে আরো ২৩ দিন পর। তবে তার আগে দেখে নিতে পারেন বাবরি মসজিদ নিয়ে গত পাঁচশ বছরের টানাপড়েন।
১৫২৮ সাল: অযােধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করান মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মির বাকি। বছর দুয়েক আগেই ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর।
১৮৮৫ সাল : মুঘল যুগ শেষ হয়ে গেছে ২৮ বছর আগে। ভারতে ব্রিটিশ রাজত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত। ফৈজাবাদের জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামাের বাইরে সামিয়ানা তৈরি করে রামলালার মূর্তি স্থাপনের অবেদন জানান মহন্ত রঘুবীর দাস। আবেদন খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ আদালত।
১৯৪৯ সাল: বছর দেড়েক আগে ভারত স্বাধীন হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, শীতের রাত। বিতর্কিত কাঠামাের মূল গম্বুজের নীচে রামলালার মূর্তি স্থাপিত হলো। মন্দিরপন্থীরা দাবি করলেন, রামলালা প্রকট হয়েছেন।
১৯৫০ সালা : গােপাল সিমলা এবং মহন্ত রামচন্দ্র দাস ফৈজাবাদ আদালতে আলাদা আলাদা মামলা করে বিতর্কিত স্থানে রামলালার পূজার অনুমতি চাইলেন।
১৯৫৯ সাল : বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করে নির্মোহী আখড়া।
১৯৮১ সাল : ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে তখন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশ সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াক্ফ বাের্ড।
১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ : বিতর্কিত কাঠামাের দরজা হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দিতে বলে ফৈজাবাদের আদালত।
১৪ আগস্ট, ১৯৮৯ : বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বহাল রাখার নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ : স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত তারিখগুলাের অন্যতম। উগ্র হিন্দুদের হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে যায় বাবরি মসজিদ।
৩ এপ্রিল, ১৯৯৩ : সংসদে আইন পাস করিয়ে বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমির দখল নেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
২৪ অক্টোবর, ১৯৯৪ : ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকি মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, কোনো এক মসজিদকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরা হবে না।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০ : বাবরি মসজিদ মামলার রায় দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের উপর দাড়িয়ে জানাল, বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সুন্নি ওয়ার্ফ বাের্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালা বিরাজমানের মধ্যে।
৯ মে, ২০১১ : ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
২১ মার্চ, ২০১৭ : ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলেন, আদালতের বাইরেই মীমাংসা করে নেওয় হোক বাবরি মসজিদ বিতর্কের।
৭ আগস্ট, ২০১৭ : বাবরি মসজিদ মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।
২০ নভেম্বর, ২০১৭ : উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াক্ফ বাের্ড জানায়, সেখানে মন্দির বানালে আপত্তি নেই। পরিবর্তে লখনৌতে মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হােক।
৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ : প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশােক ভুষণ এক বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের বেঞ্চে আবার নতুন করে শুরু বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি।
২৯ অক্টোবর, ২০১৮ : নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে আবার নতুন করে তিন বিচরপতির বেঞ্চ গঠন হয়।
৮ জানুয়ারি, ২০১৯ : প্রধান বিচারপি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে এবার তৈরি হয় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। কারো সরে দাড়ানাে, কারো অসুস্থতার কারণে সেই বেঞ্চে পরে কিছু পরিবর্তনও হয়।
৮ মার্চ, ২০১৯ : বিচারপতি এফএম কলিফুল্লা, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
২ আগস্ট, ২০১৯ : মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, ৬ আগস্ট থেকে রােজ শুনানি হবে অযােধ্যা মামলার।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ : মধ্যস্থতা কমিটিকে আবার আলােচনা শুরু করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। এ মাসের মধ্যে আলােচনা শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
১৬ অক্টোবর, ২০১৯ : প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, অনেক হয়েছে, আজই শেষ করতে হবে অযােধ্যা মামলার শুনানি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।