জুমবাংলা ডেস্ক: মহাজাগতিক প্রাণী এলিয়েন নিয়ে সারা বিশ্বে শোরগোল শুরু হয় ১৯৫০ সালের পরই। এরপর ধিরে ধিরে এদের নিয়ে নানা গল্প রটলো চারদিকে। সৃষ্টির অপার রহস্যের সঙ্গে সঙ্গে মানব সৃষ্ট নানা কর্মকাণ্ডও অনেক রহস্যহের জন্ম দেয়। তেমনি আমেরিকার ‘এরিয়া ৫১’ ঘাটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক রহস্য!
আমেরিকার নেভাডায় ‘এরিয়া ৫১’ রহস্যের জন্ম। গ্রুম হ্রদের দক্ষিণের এক বিশাল (প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিমি) সামরিক ঘাঁটিকে ঘিরে। আমেরিকান সরকার গোপনে তাদের বিভিন্ন সামরিক বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণা আর তার পরীক্ষা চালানোর জন্য এই ঘাঁটি তৈরি করেছিল। সেখানে লেখা ছিল- ‘কোনো বেসামরিক মানুষের সেখানে প্রবেশ নিষেধ, কেউ চেষ্টা করলে গুলি করা হবে।’
প্রথমদিকে আমেরিকান সরকার এসব বিষয়ে মুখ খুলছিল না! তাই একসময় রটে গেল- আমেরিকা পৃথিবীতে কোনোভাবে চলে আসা এলিয়েনদের ধরে সেখানে বেঁধে রেখেছে! ২০১৩ সালে সিআইএ প্রথমবারের মত এরিয়া ৫১ এর ‘অস্তিত্ব’ স্বীকার করে। এই বিশাল জায়গার আশপাশে দিয়ে যেমন বিমান চলাচল নিষেধ, কোনো মানচিত্রেও এর উল্লেখ ছিল না।
১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মত এরিয়া ৫১ ছবি ধরা পড়ে স্যাটেলাইটে। সেটা ছিল রাশিয়ার ‘ইকন্স’ স্যাটেলাইটের কৃতিত্ব। এখন শুধু মাত্র গুগল ম্যাপেও দেখতে পারবেন, তবে খুব কম অংশ। মার্কিন উপগ্রহ ‘করোনা’ ও ‘টেরা’ জায়গাটির ছবি তুলেছিল, কিন্তু আমেরিকান সরকার সব মুছে ফেলে। সিআইএ’র নথি থেকে জানা যায়, সেখানে যেসব দালান আছে সেসবে কোনো জানালা নেই, যাতে এক গবেষক দল অন্য দলের কাজ সম্পর্কে জানতে না পারেন! এমনকি যখন পরীক্ষামূলক কোনো বিমান প্রথম উড়ানো হয়, তখন কর্মীরা দালানের ভেতরেই থাকে। এসব গল্প নানা রকম সন্দেহের জন্ম দেয়।
১৯৪৭ সালে নিউ মেক্সিকোর কাছে বিধ্বস্ত হওয়া রসয়াল বিমানকে অনেকে ভেবেছে এলিয়ানদের উভযানের ক্র্যাশ হিসেবে। আবার অনেকে ভাবেন, চন্দ্রজয় একেবারেই ভুয়া একটি কথা। রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতেই এরিয়া-৫১’র ভেতরে নাটক সাজিয়ে ছিল তারা! মানুষের মনের এই সন্দেহের দানাকে উসকে দেয় হলিউডের ইন্ডিপেন্ডেন্স মুভিটি। সেখানে তারা পৃথিবী আক্রমনের অংশ হিসেবে এরিয়া ৫১ এ হামলা করে। পরিচালক ১৯৪৭ সালের রসয়ালের বিধস্ত বিমানকে এলিয়ানদের হারিয়ে যাওয়া উভোযান হিসেবে দারুণ গল্প ফেঁদেছিলেন, সেটা কি বলতে হবে? দেখে নিন!
যখন রহস্য জমে একেবারে ক্ষীর, তখন আরো বেশি চুপ ছিল আমেরিকান সরকার! তবে পদার্থবিজ্ঞানী বব লেজার গরম কড়াইয়ে ঘি ঢেলে দেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এরিয়া ৫১-এ রেটিকুলাম ৪ নামের একগ্রহ থেকে আসা এলিয়েন ও এক ফ্লাইং সসার আছে।’ তিনি জব্দ করা এলিয়েনটির একটা বর্ণনাও দেন। এছাড়া বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এখান থেকে ভিনগ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ হয়েছে বলে দাবি করেন এখানে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা অনেক কর্মকর্তা।
স্যাটেলাইটের ছবি থেকে দেখা যায়, জায়গাটিতে সাতটি রানওয়ে আছে। এরমধ্যে ব্যবহার করা হয় না একটি। এখানে সাধারণ বিমান ওড়া নিষেধ ছিল। তাই বৈমানিকরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘দি বক্স’। মার্কিন বিরোধীরা তো এক নামেই একে ‘এরিয়া অফ কন্সপায়রেসি’ নামে ডাকে। তবে ধারণা করা হয়, ইউ-২, এক্স-১৫, এ-১২সহ নানা আধুনিক মার্কিন সামরিক বিমান এখানেই তৈরি হয়েছে। ভেতরে লকহেড মার্টিনের একটি গবেষণাগার আছে বলে শোনা যায়।
এরিয়া ৫১ এখনো বহাল তবিয়তেই চলছে। এখন এর সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। তবে ভেতরে যে ঠিক কী নিয়ে কাজ চলছে তা নিয়ে বাইরের জগতে বসে অনুমান করা খুব কঠিন। আর অনুমান করলেও সেটা সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের কোনো উপায়ও নেই। কী মনে হয় আপনার? কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতো আপনিও কি মনে করেন ইউএফও, এলিয়েন, ওয়ান-ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট নিয়ে কাজ চলছে এরিয়া ৫১ এ? নাকি মার্লিন, পোককের মতো ইতিহাসবিদদের কথাই সঠিক যা বানচাল করে দেয় অনেকের স্বপ্নের ইউএফও আর এলিয়েনদের? সঠিক উত্তরটা কি আদৌ পাওয়া সম্ভব?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।