জুমবাংলা ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রায় ঘোষণা করবেন।
নুসরাতের পরিবার ছাড়াও দেশবাসীর প্রত্যাশা- আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পাবে। রায়ের মধ্য দিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিতের মাধ্যমে নুসরাতের মতো অসংখ্য প্রতিবাদী নারী অন্যায়-অবিচারকে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয় করবে। এতে পরাজিত হবে অশুভ শক্তি।
মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত ও আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, এটাই চাওয়া।
মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নুসরাতকে যেভাবে হত্যা করা হয়, তা গোটা জাতির বিবেককে নাড়া দেয়। অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে এ মামলার তদন্ত অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়েছে। অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্কেচম্যাপ ও ফ্লোচার্টের মাধ্যমে এ হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়। আদালতে এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন অতীতে হয়নি।
গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে শ্নীলতাহানি করেন ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা। ওই দিন মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার হন তিনি। ২৮ মার্চ সিরাজকে কারাগারে পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদের তত্ত্বাবধানে অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধন হয়। একই দিন কাউন্সিলর মামুনের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের বিপক্ষেও মানববন্ধন হয়।
পরদিন ফেনীর জেলখানায় গিয়ে সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন এ মামলার আসামি নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুল কাদের, জাবেদ, রানা, অধ্যক্ষের স্ত্রীসহ সাতজন।
গত ১ এপ্রিল জেলখানায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে শামীম, নূর উদ্দিনসহ পাঁচজন। ওই দিন ডিসি ও এসপির কাছে অধ্যক্ষের পক্ষে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ৩ এপ্রিল আবার ফেনীর জেলখানায় প্রিন্সিপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৫ জন। ৪ এপ্রিল বিকেলে মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের টিনশেড ভবনের পাশে অধ্যক্ষের পক্ষে প্রথম বৈঠক হয়। সেখানে নূর উদ্দিন, জোবায়েরহ ছয়জন উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় বৈঠক হয় সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ওই বৈঠকে ২০ সদস্যের মুক্তি পরিষদ গঠন হয়। দ্বিতীয় দফার বৈঠকে উপস্থিত ছিল ১৬ জন।
৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের তৃতীয় তলার ছাত্র হোস্টেলে তৃতীয় দফায় বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল নূর উদ্দিন, শামীম, জোবায়ের, কাদেরসহ ১০ জন। হত্যায় ব্যবহূত সরঞ্জাম কেনায় অর্থ দেয় কাউন্সিলর মাকসুদ আলম। কেরোসিন কেনে শামীম, বোরকা ও হাতমোজা কিনেছে কামরুন্নাহার মনি। এর আগে উম্মে সুলতানা পপির মাধ্যমে শামীমের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা পায় মনি। ৬ এপ্রিল বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে বলে ছাদে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন দেওয়া হয়। একটি গ্রুপ এ কাজে নিয়োজিত ছিল। আরেকটি গ্রুপ মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টার ও গেট পাহারায় ছিল। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেক বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
গত ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এ মামলায় মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৮৭ জন। নুসরাত হত্যার পর বেরিয়ে আসে এসপি, এডিএম (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ও ওসির বিতর্কিত ভূমিকার কথা। নুসরাতের পরিবারও বলে আসছে, প্রশাসনের লোকজন দায়িত্বশীল আচরণ করলে হয়তো নুসরাতকে ওই পরিণতি বহন করতে হতো না।
আসামি যারা : এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হচ্ছেন- অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল এবং সানাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন।
অধ্যক্ষ সিরাজ দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক ছাত্রীকে নিপীড়ন করে আসছিলেন। একপর্যায়ে তিনি টার্গেট করেন ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে। কৌশলে নিজ কক্ষে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি করেন সিরাজ। তবে তার কুকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান নুসরাত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবাদ করেন তিনি। এতে হতচকিত হন সিরাজ। নুসরাতের কারণে তাকে জেলে যেতে হয়। নুসরাতের প্রতিবাদী মানসিকতাকে মেনে নিতে পারেননি অধ্যক্ষ। তাই জেলে বসে সিরাজ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে নুসরাত হত্যার ঘৃণ্য পরিকল্পনা করেন। তার গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছিল। নুসরাত প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে সোনাগাজী থেকে সারাদেশে। নুসরাত পরিচিতি পান প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।