আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পারিবারিক জীবনে আর্থিক অচলাবস্থা পরিবর্তনের বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসী হন অনেকেে। রাষ্ট্র বা সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতিও আসে প্রবাসীদের আয় থেকে। সেই প্রবাসে গিয়ে চলতি বছরে গেল ১০ মাসে জীবন দিয়েছেন ১১৯ জন নারী গৃহকর্মী। যার মধ্যে ৩০জনই আত্মহ’ত্যা করেছেন বলে জানায় সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির এক সমীক্ষায় এমন ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দুর্দশা কিংবা বিষাদের এই চিত্রে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে খুলনার মেয়ে আবিরুন বেগমের। সমীক্ষার এই তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১১৯ নারীসহ দেশে ফিরেছেন ২৯০০ প্রবাসীর মরদেহ।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে সৌদি আরবে যান আবিরুন বেগম। তিনিও ভেবেছিলেন হয়তোবা প্রবাসে গিয়ে অন্যান্যদের মত পরিবারের অর্থনীতির চাকা কিছুটা হলেও সচল করতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অর্থনৈতিক উন্নতি তো দূরে থাক শেষমেষ নিজের জীবনটাই দিয়ে দিতে হয়েছে প্রবাসে।
সৌদি আরবের নারী গৃহকর্মী প্রবাসী আবিরুন বেগম চলতি বছরের ১৭ জুলাই নিজ গৃহকর্তার বাসায় মারা যান। মৃ’ত্যুর ৫১ দিন পর খবর জানতে পারে তার পরিবার। পরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগিতায় দূতাবাস ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনা আবিরুনের লা’শের সনদে মৃ’ত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয় হ’ত্যা।
তবে আবিরুনকে সৌদি আরবে পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি ‘ফাতেমা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস’ (আরএল-১৩২১) বলছে, আবিরুনকে হ’ত্যা করা হয়নি। তিনি সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সৌদি আরবে হ’ত্যার তিন মাস পর দেশে ফিরিয়ে আনা হয় খুলনার মেয়ে আবিরুন বেগমের মরদেহ। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার লা’শ আসার পর বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৭টায় বিমানবন্দর থেকে মরদেহ গ্রহণ করে আবিরুনের পরিবার।
বিমানবন্দরে আবিরুনের লা’শ নেয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে তাঁর ছোট বোন রেশমা জানায়, শুরুতে সৌদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তা আবার বাতিল করেছিলেন আবিরন বেগম। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের চাপ ও হুমকির মুখে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সৌদি যেতে বাধ্য হন আবিরুন। সেখানে গিয়ে নিয়োগকর্তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। সমস্যার কথা নিয়ে এজেন্সি ও দালালের কাছে গেলে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় পরিবারকে। এ সময় এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যে আবিরুন আর কথাও বলবে না কোনোদিন। এমতাবস্থায় এজেন্সির এমন হুমকির মুখে পরিবারও ছিল অসহায়।
আবিরুনের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার নিয়োগকর্তা আবিরুনের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে। এমনকি দুই বছরে কোনো বেতনও তাকে দেয়া হয়নি। মৃ’ত্যুর পর তাদেরও জানানো হয়নি। তারা বলছেন, যে নিয়োগকর্তার বাড়িতে ছিলেন আবিরুন শুরু থেকে সেখানেই নির্যাতিত হচ্ছিলেন তিনি। বারবার বলার পরেও কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, আবিরনের পরিবার আমাদের জানায়, নিয়োগকর্তা তাকে হ’ত্যা করেছে। কিন্তু লা’শটি তারা আনতে পারছিলো না। আমরা যেন সহায়তা করি। এমতাবস্থায় ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে আবিরুন বেগমের লা’শ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
পরিবারের সদস্যের এমন নির্মম পরিণতি দেখে আবিরুনের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এখন আমরা শুধু চাই এমনভাবে যাতে আর কেউ তাদের স্বজনদের না হারান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।