জুমবাংলা ডেস্ক : ইঞ্জিন সংকট কাটাতে সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত থেকে ২০টি ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারত থেকে ইঞ্জিন আনতে রেলওয়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারতীয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। গতকাল রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, ভারত ভাড়ায় নয়, বিনা মূল্যে ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশ রেলওয়েকে সরবরাহের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
গত ২৮ এপ্রিল রেলভবনে ইঞ্জিন সম্পর্কিত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রেলওয়ের বিদ্যমান মেয়াদোত্তীর্ণ (বয়সোত্তীর্ণ) ইঞ্জিনগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের কারণেই রেলওয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য ভারত থেকে ‘স্বল্পমূল্যে’ অথবা ‘সৌজন্য’ হিসেবে ১০টি মিটারগেজ ও ১০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন আনার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) রাশিদা সুলতানা গণি, যুগ্ম মহাপরিচালক (মেকানিক্যাল) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী ও উপপরিচালক (মার্কেটিং) কালিকান্ত ঘোষ ভারতীয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী পরিচালক (ট্রাফিক-ট্রান্সপোর্ট) মনোজ কুমার শ্রীবাস্তব।
এ প্রসঙ্গে গতকাল রেলপথমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ইঞ্জিনগুলো দেয়ার ব্যাপারে ভারত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ভারত থেকে নির্দিষ্ট ভাড়ায় ইঞ্জিনগুলো আনা হবে। পাশাপাশি আমরা ‘সৌজন্য’ হিসেবেও ইঞ্জিনগুলো আনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ভারত আমাদের বিনামূল্যে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহে রাজি হয়েছে।
পরে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের লাইনে চলার উপযোগী ইঞ্জিনগুলো ভারত থেকে নিয়ে আসা হবে। আশা করছি, দুই মাসের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রেলের বহরে থাকা সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা ২৭১টি। সব ইঞ্জিনই ডিজেলচালিত। এর মধ্যে ৯৪টি ব্রডগেজ ও ১৭৮টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। ৯৪টি ব্রডগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ৫৫টিরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (২০ বছর) শেষ হয়েছে। একইভাবে ১৭৮টি মিটারগেজ ইঞ্জিনের ১৩৯টিরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। আয়ুষ্কাল বজায় থাকা ইঞ্জিনগুলোর ৪৬টি যোগ হয়েছে গত ১০ বছরে।
বর্তমানে দেশে দিনে ৪০৩টি ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ৩৫২টি যাত্রীবাহী ও ৫১টি পণ্যবাহী ট্রেন। এসব ট্রেনের বিপরীতে সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২৭১টি। স্বভাবতই ইঞ্জিন স্বল্পতায় ভুগছে সংস্থাটি, যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পরিচালনা কার্যক্রম।
সংকট কাটাতে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০টি ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেস রেল লোকোমোটিভ ইনকরপোরেশনের কাছ থেকে। প্রতিটি ২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা হিসাবে এসব ইঞ্জিন কিনতে রেলের ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে পৃথক দুটি প্রকল্পে কেনা হচ্ছে ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। প্রতিটির দাম পড়ছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। এতে ব্যয় হচ্ছে আরো প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ইঞ্জিনগুলো কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে এসব ইঞ্জিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে ২০২০-২২ সালের মধ্যে। এ সময়ে ইঞ্জিন সংকট কাটাতে ভারতের ইঞ্জিনগুলো আনার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।