জুমবাংলা ডেস্ক: সন্ত্রাস কখনো রাজনীতির অংশ হতে পারে না। হোক সেটা আভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে সন্ত্রাস এখন বিশ্বরাজনীতির প্রধান হাতিয়ার। যারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান কিন্তু বিশ্ববাসীর ভালোবাসা অর্জনে চুড়ান্ত অক্ষম তারা সন্ত্রাস আর বিদ্বেষকেই বানিয়েছেন উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার। এই বিদ্বেষ আগ্নেয়াস্ত্রের চাইতেও ভয়ঙ্কর। আগ্নেয়াস্ত্রের সুনির্দিস্ট লক্ষ্য ভেদ থাকে, কিন্তু বিদ্বেষের বিষক্রিয়া মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দিগ্বিদিক ।
অস্ত্র বিক্রির ঘৃণ্য প্রতিযোগিতায় দেশে দেশে যুদ্ধ বাধাবার চেষ্টায় যখন স্বেচ্ছামোড়ল স্বার্থান্বেষীরা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে ঠিক সেই সময়ে কিছু শান্তিপ্রিয় সামর্থবান দেশ নিজেদেরকে পারমাণবিক অস্ত্রে সুকৌশলে সাজিয়ে ফেলেছে যা ওইসব স্বেচ্ছা মোড়লশক্তিগুলোকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তাই তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে দেশে দেশে যুদ্ধ বাধাবার পরিবর্তে জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ ছড়াবার কৌশল নিয়েছে। বর্ণবাদ আর ধর্মকে ব্যবহার করে তারা সফল হতে চায়। কিন্তু বর্ণবাদ কোনো কোনো ক্ষেত্রে যখন ওইসব ঘৃণ্যশক্তির জন্য বুমেরাং হচ্ছিল তখন তারা ধর্মীয়বিদ্বেষকেই সবচাইতে কার্যকর কৌশল হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টায় নেমে পড়ে, আর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের আবেগকে টার্গেট করে। নিরবচ্ছিন্ন অপপ্রচার আর উস্কানি দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে উপর্যুপরি আঘাত হেনে তাদেরকে উত্তেজিত করতে থাকে।
কারণ, তারা জানে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস আর আবেগের প্রতি অন্য সব ধর্মের মানুষের একটা ঐতিহ্যগত বিরোধিতা রয়েছে। তারা নিজেদের অস্তিত্ব নিরাপদ রাখতে অন্য সব ধর্মবিশ্বাসী জাতি গোষ্ঠীকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ করার কৌশল হিসেবে মুসলমানদেরকে গোপনে আঘাত করতে থাকে, যাতে তারা উত্তেজিত হয়ে পাল্টা আঘাত করে। আর যখনই উপর্যুপরি আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে কোন মুসলিম গোষ্ঠী পাল্টা আঘাত করেছে তখনই তারা তা ব্যাপক প্রচারণায় এনে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী বলে এবার প্রকাশ্যে আঘাত হানতে শুরু করেছে।
একমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় পোশাকই সারা বিশ্বে একইরকম যা ধর্মীয় প্রধান থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মুসলমানেরা পরিধান করেন। অস্ত্র ব্যবসায়ী ওইসব দেশ মুসলমানদের পোশাক আর আচরণকে নকল করে বিতর্কিত আচরণ আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হয়ে মুসলমানে মুসলমানে বিরোধ সৃষ্টি করেছে যাতে অন্যধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় নিরাপদ থাকতে পারে। কারণ, ওইসব অস্ত্র ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা নিজেরা অন্য ধর্মের বিশ্বাস লালন করেন।
অস্ত্র ব্যবসার সাথে সাথে আরো একটা ঘৃণ্য স্বার্থে তারা জাতিগত বিদ্বেষকে ব্যবহার করছেন। সেটা হচ্ছে কম সামরিক শক্তি সম্পন্ন দেশের বিশেষতঃ মধ্যপ্রাচ্যের খনিজসম্পদে অন্যায্য প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করা। গোত্রে গোত্রে সহিংসবিরোধ ঘটিয়ে আবার নিজেরাই মধ্যস্ততার নামে ওইসব দেশগুলোতে সরকারের উপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। কম মূল্য বা বিনামূল্যে তাদের সম্পদে দখলদারিত্ব চালাচ্ছে। এইসব ঘৃণ্য বিশ্বরাজনীতির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
ধর্মীয় বিদ্বেষ আমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে যে, মানবিকতাই সব ধর্মের অন্যতম নিদের্শনা। বর্ণবাদ আমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে যে, সব মানুষ একই ‘জাত’। শুধুমাত্র ধর্ম গ্রন্থের ভিন্নতার কারণে আমরা কোনো ধ্বংসযজ্ঞকে বাহবা দিতে পারি না, শুধুমাত্র বর্ণ পার্থক্যের জন্য আমরা কোনো নির্দিস্ট চেহারার মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণকে সমর্থন করতে পারি না।
পারস্পরিক সহযোগগিতার তাগিদে আমরা সমাজ জীবনে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করি বটে। কিন্তু সেইসব গোষ্ঠীবদ্ধতা কেবলই কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসরের একতাবদ্ধতা। বাস্তবে সব গোষ্ঠীমিলেই একটি গোষ্ঠী হয়, যার নাম মানবগোষ্ঠী। মত বা আদর্শের সঙ্গে প্রচার বা প্রভাবের সম্পর্ক আছে, কিন্তু বাধ্যতার কোনো সম্পর্ক নাই।
সকল পেশী শক্তি আর বিদ্বেষাশ্রয়ী স্বার্থপরগোষ্ঠীকে সমর্থনহীন করে সহমর্মিতা আর মানবিকতাকে সবার উপরে বিজয়ী করতে হবে। কারণ, জীবনই মূল্যবান। জীবনের বিপক্ষে সবই মূল্যহীন ।
সৈয়দ মইনুজ্জামান (লিটু)
লেখক, রাজনীতিবিদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।