জুমবাংলা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রোববার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে সভামঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। হাসিনা মহিউদ্দিন ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সমপাদক সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম এবং কৃষি বিষয়ক সমপাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকেও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া ও দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
আর এ নিয়ে সভা চলাকালীন সময়ে নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদও করেছেন। সোমবার দিনভর এ নিয়ে উত্তাপ চলছে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীরা। হাসিনা মহিউদ্দিন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা। তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় মঞ্চ থেকে নামতে বলা হয়েছিল। দলের শৃঙ্খলা সবাইকে মানতে হবে। তাহলে দল সুশৃঙ্খল ও গতিশীল হবে। নেতাকর্মীদের পরসপরের মধ্যে সহমর্মিতা বাড়বে, শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে। মেয়র নাছির বলেন, সভা শুরুর পর কারা মঞ্চে বসবেন সেটা আমি সঞ্চালক হিসেবে বারবার ঘোষণা দিয়েছি। আমি বারবার সবার কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেছি যে-আমরা সুশৃঙ্খলভাবে সভা শেষ করতে চাই। এরপরও কেউ কেউ মঞ্চে উঠেছেন। আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করিনি, অসৌজন্যমূলক আচরণও করিনি। শুধু অনুরোধ করে মঞ্চে কারা বসবেন-সেটা নিয়ে সিদ্ধান্তটা ওনাদের জানিয়েছি। হাসিনা মহিউদ্দিনের বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, মহিউদ্দিন ভাই আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত নেতা। এখানে মহিউদ্দিন ভাইকে টেনে আনা সমীচীন নয়। অহেতুক খোঁচা দেওয়াও সমীচীন নয়। এটা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়ে আছেন, ওনারা কি মঞ্চে গিয়ে বসে থাকেন? ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের দলের সেক্রেটারি, ওনারও ভাইবোন আছেন। ওনারা কি মঞ্চে গিয়ে বসে থাকেন? আমাদেরও ভাইবোন আছেন, তারা কি মঞ্চে ওঠেন?
তিনি বলেন, আমরা খুব সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিনিধি সম্মেলন সমপন্ন করেছি। কোনো স্লোগান-পাল্টা স্লোগান ছিল না। ন্যূনতম বিশৃঙ্খলা ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা যারা এসেছেন, সবাই বলেছেন অনেকদিন পর চট্টগ্রামে একটি সুশৃঙ্খল সভা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। মঞ্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাকে হাতের ইশারায় মঞ্চে ডাকেন। তখন নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সমপাদক চন্দন ধর তাকে মঞ্চে পৌঁছে দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন অতিথিদের দ্বিতীয় সারিতে বসেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর সভার সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গিয়ে তাকে চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে বলেন এবং মঞ্চ থেকে নেমে যাবার নির্দেশ দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন এরপরও বসে থাকলে মেয়র আবারও গিয়ে তাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন। তখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান এবং সভার পুরোসময় মঞ্চের নিচে ডানপাশে একটি চেয়ারে বসে থাকেন। এ বিষয়ে হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, আমাকে নগর আওয়ামী লীগের কেউ না কেউ ডেকেছে বলেই আমি মঞ্চে গিয়েছি। সভা আহ্বান করেছে নগর আওয়ামী লীগ। সেখানে কি আমি জোর করে উঠতে পারবো? ঘটনা যা হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।
মঞ্চের সামনে দর্শক সারিতে বসা চন্দন ধর ও নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন এবং আলাদাভাবে মঞ্চের কাছে গিয়ে মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। উভয়ে হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রতিবাদ করেন। মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) নিজ থেকে মঞ্চে উঠেননি। মাহতাব ভাই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উনাকে মঞ্চে ডেকে নেন। সবাই এটা দেখেছেন। এরপরও ওনাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। মহিউদ্দিন ভাই বেঁচে নেই। ওনার স্ত্রী কিংবা ওনার পরিবারের জন্য আমরা যারা মহিউদ্দিন ভাইয়ের কর্মী, আমাদের আবেগ আছে। সেজন্য আমি মেয়র মহোদয়ের কাছে গিয়ে বলেছি, কাজটি শিষ্টাচারবহির্ভূত হয়েছে। একজন কর্মী যেভাবে নেতার কাছে গিয়ে বলেন, আমি সেভাবে বলেছি। এখানে ঝগড়া-সংঘাতের কোনো বিষয় নয়। হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার আগে আবদুস ছালাম এবং আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে মেয়র নামিয়ে দিলে তারাও দর্শক সারিতে গিয়ে বসেন। তবে কিছুক্ষণ পর দুজনই অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যান বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এম এ ছালামের সঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরোধ তুঙ্গে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটল সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলনেও। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার সমপাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও বলেছেন, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হই, সত্যিকার সমাজের কর্মী হই। তাহলে আমাদেরকে মঞ্চে উঠার কদর্য প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। শালীন ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রাজনীতি করতে হবে। তাহলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সমপাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সূত্র: মানবজমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।