জুমবাংলা ডেস্ক : আবুল হোসেন (২২)। জন্ম থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শুকদেবপুরের ভ্যান চালক আব্দুল মালেকের বড় ছেলে তিনি। কবিরাজি থেকে শুরু করে নানা মতের চিকিৎসাতেও সুস্থ করা যায়নি তাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে পাগলামির মাত্রাও। ছাড়া অবস্থায় বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ভাংচুর করত সম্ভাব্য সব কিছু। ঘরের খুঁটি ধরে ঝাঁকাত,মানুষ দেখলেই তেড়ে যেত। অনুপায় হয়েই প্রায় বছর পাঁচেক আগে থেকেই শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। তবে এভাবে আর কত দিন? অমানবিক বন্দিত্ব ও সেবা-শুশ্রূষায় রীতিমত হাফিয়ে উঠেছেন তার পরিবারও।
শিকলবন্দী আবুলের পিতা ভ্যানচালক আব্দুল মালেক সরদার জানান, তিন ছেলের মধ্যে আবুল হোসেন সবার বড়। জন্ম থেকেই সে কিছুটা মানসিক অপ্রকৃতিস্থ ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিষয়টি স্পষ্ট হয় পরিবারের সবার কাছে। এরপর আদরের সন্তানকে সুস্থ করতে চলে গরিব পিতা-মাতার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। প্রথমত কবিরাজি। এরপর যে যা বলত সে মতেই চিকিৎসা। প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকে পাগলামির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে বেঁধে রাখা। বাড়ির পেছনে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। পরিবারের দাবি,তাকে সুস্থ করতে সেখানেই নাকি তাকে কবিরাজি চিকিৎসা চলছে।
তিনি আরো জানান,অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাতে ছেলের এই অবস্থায় তাকে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। বছর দুয়েক আগে কপিলমুনিতে পাবনা থেকে একজন মানসিক ডাক্তার আসার খবরে আবুল হোসেনকে সেখানে নিয়ে যান। তবে ডাক্তারের কথায় হতাশ হলেও নিরাশ হননি তিনি। ডাক্তারের বক্তব্য, আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেনা সে। তাই শিকলে বন্দি অবস্থায় কবিরাজি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আব্দুল মালেক আরো জানান, বর্তমানে তিনি নিজে ভ্যান চালানোর পাশাপাশি ছোট দু’ছেলেও সংসারের সহযোগিতায় শ্রম বিক্রি করে। তবে টাকার অভাবে ছেলেকে সু-চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এ অসহায় বাবা।
খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া মিয়ার মসজিদ থেকে নওয়াপাড়া রোডে ঢুকতেই সুকদেবপুর গ্রামের রাস্তা। খানিকটা এগিয়ে যেতেই রাস্তার পাশে দেখা মিলবে শিকল বন্দি ২২ বছরের যুবক আবুল হোসেনকে। তবে অগন্তুকদের দেখলেই শিকল মুক্তির ইশারাময় আকুতি যে কারো চোখে পানি এনে দেবে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তাকে শিকল থেকে মুক্ত করলেই শুরু করে ভাংচুর। বিশেষ করে সামনে যাকে পায় তাকে ধরে মারপিট শুরু করে। মানুষ দেখলেই তেড়ে যায়। যখন তখন কাউকে কিছু না বলেই এদিক সেদিক চলে যায়। তার পাগলামিতে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী ও পরিবারকে পরিত্রাণ দিতেই শুরু হয় তার বন্ধী জীবন। গত প্রায় ৫ বছরেও যার সমাধান আসেনি।
আবুল হোসেনের পিতার করুণ আকুতি, ছেলের সু-চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের পাশাপাশি সহৃদয়বানরা এগিয়ে আসুন। বাবা হয়ে ছেলের বন্দি অমানবিক জীবন তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন সোনা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আবুল হোসেনের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়। তবে তিনিও তার সু-সুচিকিৎসায় সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।