জুমবাংলা ডেস্ক : ৯ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তবে মানিকগঞ্জের শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার পদ্ম-যমুনা নদীর অংশে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারে মেতেছে মৌসুমি জেলেরা। কিছু অসাধু মৌসুমি জেলে সুয়োগবুঝে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ শিকার করে ক্রয়-বিক্রয় করছে অবাধে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ সব জেলেরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। এ দিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও লোকবল কম এবং নদীর সীমানা বেশি হওয়ায় অভিযান পুরোপুরি সফল হচ্ছে না, দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, জেলার এ তিন উপজেলার পদ্মা-যমুনার অংশে প্রশাসনের ব্যাপক অভিযান ও ধরপাকড়ের মধ্যেও চলছে মৌসুমি জেলেদের ইলিশ শিকারের মহোৎসব। জেলেরা নির্বিচারে শিকার করছে মা ইলিশ। নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখা যায় নদীতে ভাসছে শত শত ইলিশ শিকারের নৌকা। প্রতিদিন জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চকচকে রুপালি মা ইলিশ। জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ ক্রয় করার জন্য ক্রেতারা নদী পার হয়ে চরাঞ্চলগুলোতে গিয়ে ইলিশ নিয়ে আসছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ বহনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে ভিন্ন কৌশল। শিশু, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও নারীদের মাধ্যমে ভ্যানিটি ও কাপড়ের ব্যাগে এসব ইলিশ নদীর এ পারে এনে ক্রেতাদের কাছে নিরাপদে পৌঁছে দিচ্ছে এ সকল ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে প্রশাসনের হাতে প্রতিদিন আটক হচ্ছে জেলেরা। জব্দ করা হচ্ছে জাল ও মাছ। গত এক সাপ্তাহে জেলায় মোট ১০৯ জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়েদে কারাদণ্ড ও ২২ জনকে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি এক মেট্রিকটন ইলিশ ও ১০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মাছ ধরার বেশ কিছু নৌকা। এ ছাড়া র্যাব ৪ এর একটি দল গত কয়েক দিন আগে আরিচা ঘাটে পাঁটি গুদামে অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা মুল্যের ইলিশ ধরার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে পরে তা পুড়িয়ে ফেলে। জব্দকৃত ইলিশ বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসাগুলোতে।
পদ্মা-যমুনার কয়েকটি চরাঞ্চলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সুবিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলছে মা ইলিশ শিকার। এরা প্রতিটি নৌকার মালিক ও ৫/৬ জন ভাগিদার একসাথে মা ইলিশ নিধন করার জন্য সর্বনিম্ন ৪ সেট করে কারেন্ট জাল ক্রয় করে। তাদের মতে, অভিযানে ধরা পড়লে জাল পুড়িয়ে ফেলা হবে। বিধায় এক/দুই সেট জাল পোড়ালেও মা ইলিশ ধরা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এর জন্য একাধিক সেট জাল ক্রয় করে মজুদ করে রাখেন এ সকল মৌসুমি জেলেরা। এসব কারেন্ট জাল চড়া দামে সংগ্রহ করা হয়েছে আরিচা ঘাট, জাফরগঞ্জ, দৌলতদিয়া ও কাজিরহাটের বেশ কয়েকটি দোকান থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীর পাড়ে বেশ কিছু লোক এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিবছরই এসব মৌসুমি জেলেরা সারা বছর নদীতে মাছ না ধরলেও এ সময়ে ৩/৪ লাখ টাকা করে ইলিশ বিক্রয় করবে এ টার্গেট নিয়েই নদীতে নামছে মা ইলিশ ধরতে। তাদের নিজ নিজ এলাকার ২/৩ শ মানুষ নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ নিধনে ব্যাপক আকারে প্রস্তুতি নিয়ে মা ইলিশ শিকার করছে। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব মৌসুমি ইলিশ নিধনকারীরা ঘাট এলাকার কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মীর সাথে নৌকা প্রতি ২০/২৫ হাজার টাকার চুক্তি করে নদীতে নামে ইলিশ মাছ ধরতে। এ ছাড়া নির্বিঘ্নে মাছ ধরা জন্য প্রতিদিন ৭/৮ শ টাকা করে বেতন দিয়ে সোর্স রেখেছে ইলিশ শিকারীরা। পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো টিম অভিযানে নদীতে নামলে সাথে সাথেই জেলেদেরকে মোবাইল করে জানিয়ে সজাগ করে দেয় এসব সোর্সরা। যার ফলে প্রশাসনিক পর্যায় থেকে জোরদার অভিযান পরিচালিত হলেও তেমন সফলতা না আসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাই অভিযানের সফলতা আনতে মৌসুমি মা ইলিশ নিধনকারীদের নৌকাগুলো এক মাসের জন্য জব্দ করার প্রতি জোর দাবি জানান অভিজ্ঞমহল, প্রকৃত মৎসজীবী ও হালদার সম্প্রদায়ের লোকজনেরা। এ দিকে আরিচা ঘাটের বেশ কিছু মৎস্য আরতদার বড় সাইজের ১০-১২ ডিপ ফ্রিজে ইলিশ মজুদ করছে।
শিবালয় ৩ নম্বর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেক জোরদার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কিছু অসাধু মানুষ ও মৌসুমি জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ নিধন করছে বলে জানা যাচ্ছে। মৌসুমি জেলেদের নৌকাগুলো জব্দ করা গেলে এ অভিযান পুরোপুরি সফল হতো বলে আমার মনে হয়। কারণ এত অল্প সময়ে পুনরায় একটি নৌকা বানিয়ে ইলিশ শিকার করা সম্ভব হতো না।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, প্রতিদিনই আমাদের মৎস্য অফিস, পুলিশ ও আমি ও আমার এসিল্যান্ড যৌথভাবে নিয়মিত নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করছি। প্রতিদিনই জেলেদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। তবে এ অভিযান পুরোপুরি সফল করার জন্য সাধারণ জনগণকে সচেতন হতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মনিরুজ্জামান জানান, যৌথ অভিযানে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে সমন্বয়হীনতা ছাড়াও আমাদের অফিসগুলোতে জনবল সঙ্কট ও এ নদীতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য কম বাজেট থাকায় পদ্মা-যমুনার এত বড় অংশে পুরোপুরি অভিযান সফল করা সম্ভব হচ্ছে না। তার পর ও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্য়ন্ত জেলার পদ্মা-যমুনায় অভিযান চালিয়ে ১০৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া এক মেট্রিকটন ইলিশ ও ১১ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।