আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন গর্ভবতী এক নারী। নানা রকম চেষ্টার পরেও হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো বাহন পাননি তিনি। বেকায়দায় পড়ে প্রতিবেশীর মোটর সাইকেলে চড়ে ভারতের পুরশুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন ওই নারী।
কিন্তু রাস্তায় ঝাঁকুনিতে তিনি বাইকেই প্রসব করেন। তাতে বিপদ আরো বেড়ে যায়। জানা গেছে, নবজাতক মাটিতে পড়ে গিয়ে গায়ে ধুলা-বালি লেগে যায়।
গতকাল সোমবার ভোরে ভারতের পুরশুড়ার শ্রীরামপুর বাজারে ওই ঘটনার পর পম্পা শীট নামে ওই নারী এবং তার নবজাতক মেয়েকে তড়িঘড়ি করে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসক রোহন পাল বলেন, প্রসবের জেরে ওই নারী কিছুটা জখম হন। অনেকগুলো সেলাই করতে হয়েছে। শিশুটি এখন মায়ের দুধ খাচ্ছে। আশা করি বিপদ এড়ানো গেছে।
দুর্ঘটনার জেরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘মাতৃযান’ অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় ১২ দিন ধরে চলছে না। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না-হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন প্রসূতি এবং শিশুরা। ব্লক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে। ক্ষুব্ধ আশাকর্মীরাও।
তাদের অভিযোগ, মাতৃযান না-থাকলে ১০২ নম্বরে ফোন করলে আ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে ওই নম্বরে ফোন করে সাড়া মেলে না। আবার কখনো সাড়া মিললেও গাড়ি পেতে আড়াই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। প্রসূতি বা অসুস্থ শিশুকে ততক্ষণ বাড়িতে ফেলে রেখে ঝুঁকি নেওয়া যায় না। বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। ১০২ ডায়াল করে অনেক দেরিতে পাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সে এক প্রসূতি হাসপাতাল ফটকে ঢোকার মুখেই প্রসব করেন।
আশাকর্মীদের পক্ষে তাপসী দাঁ বলেন, শনিবারই ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের বৈঠকে মাতৃযান নিয়ে সমস্যা এবং বিকল্প ব্যবস্থার জন্য ব্লক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করেছি। প্রসূতি এবং অসুস্থ শিশুদের হাসপাতাল আনতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
মাতৃযান না-থাকায় সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত বাগ। তিনি বলেন, মাতৃযানটি না-সারানো পর্যন্ত ১০২ নম্বরের অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস মিলেছে। বাইকে প্রসব হওয়া প্রসূতি এবং শিশুটি ভালো আছে।
১০২ নম্বরে ফোন করার পর সাড়া না পেলে বা সেখানে মাতৃযান দেরিতে পৌঁছানোর অভিযোগ নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এবং প্রসূতিদের হাসপাতালমুখী করতে ২০১০ সাল মাস নাগাদ ‘নিশ্চয়যান’ তথা ‘মাতৃযান’ প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। হুগলিতে চালু হয় ২০১১ সালের এপ্রিলে। প্রসূতি তো বটেই, এক বছর পর্যন্ত তার সন্তানকেও নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। ওই পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানার গাড়ি-মালিকরা সরকারের সঙ্গে কিলোমিটারপিছু নির্দিষ্ট দরে চুক্তিবদ্ধ হন। ‘মাতৃযান’ পাওয়ার জন্য ১০২ নম্বরে ডায়াল করতে হয়।
পম্পা নামের ওই প্রসূতির আত্মীয় রাখি রায় বলেন, মাতৃযানে ফোন করে সাড়া পাইনি। ফোন বন্ধ ছিল। অগত্যা পড়শির সাহায্য চাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।