রেহেনা আক্তার রেখা: গুপ্তধন কথাটি শুনলে আমাদের মনের মাঝে কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে।আমরা ছোটবেলা থেকে গুপ্তধন সর্ম্পকে হাজারো গল্প শোনেছি।গুপ্তধন বলতে আমরা সাধারণত বুঝি হীরা, সোনা, দুর্লভ রত্ন পাথর, নগদ অর্থমুদ্রার সম্ভার। মাটির নিচে, সমুদ্রতলে এই অমূল্য সম্পদগুলো লুকিয়ে রেখেছিল তার মালিক।এই গুপ্তধনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ এখন নয় সেই আদিম যুগ থেকে।পৃথিবীর নানা প্রান্তে লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছে এই গুপ্তধন ।
গুপ্তধনের জন্য মরিয়া হয়ে অনেকে ছোটছে এদিক সেদিক। অনেকে এই গুপ্ত ধনের পিছনে ছোটতে গিয়ে হারিয়েছে জীবনের মহামূল্যবান সময়। বছরের পর বছর এভাবে ছুটে চলে ফিরে এসেছে খালি হাতে।আবার গুপ্তধনের খোঁজ পেয়ে অনেকে আবার হেসেছেন তৃপ্তির হাসি। তবে গুপ্তধনের মোহ এমনই যা কখনই কাটে না।এর মোহ মানুষের মাঝে থেকে যায় যুগ যুগ ধরে।
গুপ্তধন ছাড়াও প্রাচীন হারানো কোনও জিনিস, ধর্মীয় বা ঐশ্বরিক কোনও বিষয়ের প্রতিও মানুষের ছিল অগাধ আগ্রহ। আর ‘আর্ক ‘অব দ্য কোভেন্যান্ট’ বা অলৌকিক সিন্দুক হল এমনটি জিনিস। রহস্যময় এই সিন্দুকের ব্যাপারে মুসলিম, ইহুদি, খৃস্টান- তিনটি ধর্মের অনুসারীরাই একমত যে, এ সিন্দুকটির অস্তিত্ব আছে এবং এটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রতি শতাব্দীতে হাজারও রহস্যভেদী মানুষ সেই সিন্দুকটির খোঁজ করেছেন। এখনও একদল রহস্যসন্ধানী লোক সিন্দুকটি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।কিন্তু এখনো এর সন্ধান এখনো মিলেনি।
কি এমন ধন-দৌলত আছে এই সিন্দুকে? যার কারণে মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী এটি খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই সিন্দুকের মধ্যে কোনো ধন দৌলত নেই। ভেতরে সযত্নে রাখা আছে সৃষ্টিকর্তার ১০টি অনুশাসনের বাণী। এটি লোহার তৈরি কোনো সিন্দুক নয়। মিসরের ‘একাসিয়া’ নামক একটি পবিত্র গাছের কাঠ দিয়ে সিন্দুকটি তৈরি করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে তৈরি করা হলেও সোনা দিয়ে সিন্দুকটি মোড়ানো হয়। সিন্দুকটি লম্বায় ১.১৫ মিটার, প্রস্থে ০.৭ মিটার আর উচ্চতায় ০.৭ মিটার। এটি বহন করার জন্য রয়েছে দুটি হাতল।
পবিত্র কোরানের সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৮ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে এই জিনিসটি সম্পর্কে মানুষ জানার পর এর অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছে বছরের পর বছর। ফলে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান রহস্যের। বলা হয় এই সিন্দুকটি ঈশ্বরের প্রেরিত একটি সিন্দুক। হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে এটি এক অপার রহস্যের বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে।
হিব্রু, বাইবেল আর অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশে নির্মিত হয়েছে।পেন্টাটিউক অনুসারে সিনাই পর্বতে টানা ৪০ দিন থাকার পর সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে নবী মুসা (আঃ) এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট নির্মাণের নির্দেশ পান। প্যালেস্টাইনে তৈরি হওয়ার কারণে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টকে ইসরায়েলের সৌন্দর্য নামেও অভিহিত করা হয়।
পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, সিন্দুকটি ঈশ্বরের নির্দেশেই বানানো হয়েছিল।খৃস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে নবি মুসার মৃত্যুর পর তার সান্নিধ্যধন্য নবি ইউশা ইবনে নুন সিন্দুকটির তত্ত্বাবধান করতেন। তার মৃত্যুর পর বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের পুরোহিতগণ এটি দেখাশোনা করতেন।বিশ্বব্যাপী রহস্যময় ‘আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট’ নিয়ে গবেষণা ও প্রচারণার কোনও শেষ নেই। এটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে বা যায়নি সেটা নিয়েও এখন রহস্য তৈরি হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।