জুমবাংলা ডেস্ক : কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় মা’দক ব্যবসায়ীদের আটক করতে অভিযানে গিয়ে ভুলক্রমে ভারতে ঢুকে পড়ে বিএসএফের হাতে আটক হওয়া র্যাবের তিন সদস্যসহ পাঁচজনকে মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল। এমনকি তিন র্যাব সদস্যকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধরের সঙ্গে কাদা-পানিতে গড়াগড়িও খাওয়ানো হয়। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আটকের ১০ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই নারী সোর্সসহ র্যাবের তিন সদস্যকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া হয়।
নির্যাতনের চিহ্ন শরীরে নিয়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরে আসা এলিট ফোর্স র্যাবের তিন সদস্যকে নির্যাতনের ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নির্যাতনের বিভিন্ন ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে প্রায় সকলেই প্রশ্ন তুলেছেন ‘একটি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ কেমন আচরণ! এ আচরণ কখনোই বন্ধুত্বসুলভ হতে পারে না।’ এছাড়াও র্যাব সদস্যদের আটক ও নির্যাতনের খবর ভারতীয় মিডিয়ায়ও ফলাও করে ছাপা হয়।
যদিও দুই নারী সোর্সসহ র্যাবের তিন সদস্যকে মারধরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি র্যাবের কর্মকর্তারা। আর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা বলছেন, র্যাব সদস্য ও তাদের সোর্সদের আটকের পর বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে স্থানীয় মা’দক ব্যবসায়ীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যাপক মারধর করে। এ সময় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে উৎসুক দর্শকের মতোই মারধরের দৃশ্য দেখছিল বিএসএফের কয়েকজন জওয়ান।
স্থানীয়দের কাছ থেকে তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে বিএসএফও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বলে জানা গেছে। বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার না করলেও ভারতে আটক হওয়া র্যাবের তিন সদস্যের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন ‘তাদের (বিএসএফ) আচরণ ছিল অপেশাদার, কিছুটা শত্রুভাবাপন্ন।’
বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই সমানভাবে আলোচনার জন্ম দেওয়া এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ব্রাহ্মণপাড়ার আশাবাড়ি সীমান্ত এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, ওইদিন সকালে মা’দকবিরোধী অভিযানকালে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে জিরো পয়েন্টে মা’দক ব্যবসায়ী জলিল ও হাবিলের বাড়িতে যায় র্যাবের দুই নারী সোর্স। তাদের সঙ্গে মা’দক ক্রয়ের বিষয়ে চুক্তি করে দু’জন। পরে পাঁচ লাখ টাকার জাল টাকা নিয়ে ভারতের ২০৫৯ পিলালের ১০ গজ ভেতরে ঢুকে ব্যবসায়ী জলিল ও হাবিলকে আটকের চেষ্টা করে র্যাব।
খবর পেয়ে স্থানীয় অপর মা’দক ব্যবসায়ী মন্টুর নেতৃত্বে অন্যান্য মা’দক ব্যবসায়ীরা র্যাবের তিন সদস্যসহ দুই নারী সোর্সকে আটক করে মারধর শুরু করে। এ সময় তারা র্যাব সদস্যদের কাছে থাকা পিস্তল, গুলি ও হ্যান্ডকাপ ছিনিয়ে নেয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বেধড়ক মারধরের পর আহত অবস্থায় পাঁচজনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। তাদেরকে মারধরের সময় বিএসএফ সদস্যরা কিছুটা দূরে ‘দর্শকের ভূমিকায়’ দাঁড়িয়েছিল।
অপর একটি সূত্র বলছে, তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে বিএসএফও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, মাদক ব্যবসায়ী মন্টুর বাড়ি বাংলাদেশে। মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে সে ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে গিয়ে বাড়ি করেছে। মন্টুর ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ভাষ্যে, মন্টুর নেতৃত্বেই অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাব সদস্যদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে নির্যাতন চালায়।
জহিরুল হক নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, ‘সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে র্যাবের তিন সদস্যকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করার সময় বিএসএফ-এর একটি টহল দল কিছুটা দুরে দাঁড়িয়েছিল। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নির্যাতন হয়েছে কি না- বলা মুশকিল। তবে ফেরত আসার পর র্যাব সদস্যদের সকালের চেয়েও বেশি বিধ্বস্ত দেখা গেছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্নও ছিল।’
তার ভাষ্য, ‘মারধরের সময় উপস্থিত স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে তোলা ছবিগুলোই এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।’
এদিকে ভারতে আটক র্যাব সদস্যদের মারধর কিংবা নির্যাতনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি র্যাবের কর্মকর্তারা। তবে র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মুহিতুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, ‘র্যাব-১১ এর একটি দল বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা থেকে আশাবাড়ি এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে যায়।
এ সময় মাদক চোরাকারবারীদের ধাওয়ার একপর্যায়ে র্যাবের কয়েক সদস্য অসাবধানতাবশত ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এতে ভারতীয় নাগরিকরা তাদেরকে আটকপূর্বক মারধর করে বিএসএফএর নিকট হস্তান্তর করে। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে র্যাবের তিন সদস্যসহ পাঁচজনকে ফিরিয়ে আনা হয়।’
আটক তিন র্যাব সদস্য হলেন- কনস্টেবল রিগান বড়ুয়া, আবদুল মজিদ ও সৈনিক মো. ওয়াহিদ। র্যাবের সঙ্গে থাকা দুই নারী সোর্স হলেন, কুমিল্লার শুভপুরের জাকির হোসেনের স্ত্রী লিজা আক্তার ফুফি, সুজানগরের মাইনুদ্দিনের স্ত্রী মনি বেগম। সূত্র : কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।