জুমবাংলা ডেস্ক : হবিগঞ্জে জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় নবীগঞ্জের দিনারপুরে। পাহাড়ি অঞ্চল দেবপাড়ার কুড়ো টিলায় শত বছরের পুরনো রহস্যেঘেরা কালো পাথর নিয়ে এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহল বিরাজ করছে। পাথরটি সামনে রেখে অনেকে মনোবাসনা পূরণের জন্য শিরনি বিতরণ ও মোনাজাত করেন। প্রতিদিন ওই পাথরকে দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখনে শত শত লোক আসেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে শোনেন পাথরের কাহিনি। তা সত্য না কুসংস্কার, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এলাকায়।
নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের কবুলেশ্বর গ্রামের পাশে হাজার বছরের পুরনো জঙ্গল বাড়িতে অন্তত ১ হাজার ফুট উঁচু পাহাড় কুড়ো টিলা। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরনো একটি বটগাছ। বটগাছের পাশেই একটি ছোট কদম গাছের নিচে রয়েছে শত বছরের পুরনো এই কালো পাথর। পাথরটি দিন দিন বড় হয়ে এখন প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থ হয়ে এলাকাবাসীকে আশ্চর্য করেছে।
পাথরকে নিয়ে যে গল্প
এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি মতচ্ছির আলী বলেন, তিনি তাঁর দাদার কাছ থেকে শুনেছেন পাথরটির রূপকথার গল্প। ওই এলাকায় অবস্থিত পাহাড়ঘেরা টিলার পাশে রয়েছে ইমামগঞ্জ নামে একটি ছোট বাজার। বাজারের পার্শ্ববর্তী রইছ উদ্দিনের টিলায় বসবাসকারী মৎস্যজীবী হেতিম উল্লাহ প্রতিদিন দেখতেন এক ভিক্ষুক বাজার থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে সন্ধ্যার পরে নির্জন জঙ্গল সুউচ্চ কুড়ো টিলায় উঠতেন। সে সময়ে কুড়ো টিলায় বসবাস করত নানা জীবজন্তু ও বিষাক্ত সাপ। তিনি একদিন ভিক্ষুককে অনুসরণ করতে শুরু করেন। তিনি দেখেন, ভিক্ষুক কুড়ো টিলার জঙ্গলে ঢোকেন। টিলার ওপরে উঠে একটি বটগাছের নিচে ছোট কদম গাছের কাছেই একটি কালো পাথর সরিয়ে ভিক্ষুক একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করেন। ব্যবসায়ী হেতিম উল্লাহও পাথর সরিয়ে ভিক্ষুকের পিছু পিছু গুহার ভেতরে ঢোকেন।
কিছুক্ষণ হাঁটার পরে দেখেন, ভিক্ষুক স্বর্ণের তৈরি অত্যন্ত সুন্দর একটি বাড়িতে প্রবেশ করেছেন। একপর্যায়ে ভিক্ষুক ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলে হেতিম উল্লা ঘরের একটি কোণে লুকিয়ে থাকেন। পরে দেখেন, বাজার থেকে কুড়িয়ে আনা মাছসহ অন্যান্য তরিতরকারি রান্না করা হয়। গভীর রাতে সাদা পোশাক ও পাগড়ি পরা ২১ জন দরবেশ ওই ঘরে প্রবেশ করেন। এরপর সবার সামনে স্বর্ণের তৈরি প্লেট দেওয়া হয়। কিন্তু একটি প্লেট অতিরিক্ত হয়। তখন দরবেশরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে ঘরে লুকিয়ে থাকা হেতিম উল্লাহকে খুঁজে বের করেন। পরে তাঁরা হেতিম উল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার শেষ করেন। এরপর রাতব্যাপী মিলাদ মাহফিল ও জিকির করে ফজরের নামাজ আদায় করে তাঁরা হেতিম উল্লাহকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দেন এবং এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করে দেন। দরবেশদের কথামতো তিনি চলে আসেন। পরদিন হেতিম উল্লাহর স্ত্রী ফরিজান বিবি রাতে কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে একপর্যায়ে পুরো ঘটনাটি স্ত্রীর কাছে খুলে বলেন। পরক্ষণেই হেতিম উল্লাহর মুখ থেকে রক্ত বের হয়ে সাথে সাথে মারা যান। এরপর এলাকাবাসী ওই পাথরের সন্ধানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলেও সুড়ঙ্গের মুখ থেকে পাথরটি আর সরানো সম্ভব হয়নি। গায়েব হয়ে যান ওই ভিক্ষুক ছদ্মবেশী দরবেশ। এর পর থেকে ছোট কালো পাথরটি দিন দিন বড় হতে থাকে।
কালের পরিক্রমায় পাহাড়ের জঙ্গল বিলীন হলেও কালো রহস্যময় পাথর ও বটগাছটি সাক্ষী হয়ে রয়েছে। অনেকে বলেন, ওই বটগাছের নিচে বসে দরবেশরা দিনের কাজ পরিচালনা করতেন। প্রতিদিন এ পাথর দেখার জন্য শত শত লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন। পাহাড়ের চূড়ায় বটগাছের নিচে ভক্ত-অনুরাগীরা বসে দোয়া-দরুদ পড়েন এবং শিরনি বিতরণ করেন। এলাকাবাসী ওই পাথরের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত একটি রাস্তা করেছেন।
কুসংস্কার, গুজব না বাস্তব
কুড়ো টিলার চূড়ায় অবস্থিত কালো পাথরটি নিয়ে যে রূপকথার গল্প রয়েছে, তা এলাকার অনেকে বিশ্বাস করেন না। তারা এটিকে কুসংস্কার বলে মনে করেন। সত্য হোক বা কুসংস্কার হোক, পাথরটিকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে মানুষ এখানে আসেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।