আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ার করে বলেছে—তারা আগুন নিয়ে খেলছে এতে তারা উলটো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চীনের শীর্ষ নীতি-নির্ধারণকারীদের একজন মুখপাত্র বলেন, হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের দৃঢ় সংকল্পকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের মদদ দিচ্ছে চীনবিরোধী শক্তি।
টানা ৯ সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। গত সোমবার শহরের নেতা কেরি লেম সতর্ক করেন, পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে আন্দোলন বিক্ষোভকারীদের একটি অজুহাত, তাদের উদ্দেশ্য অন্যকিছু। এদিকে, হংকংয়ে বিক্ষোভ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গতকালও বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়ে হংকং। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তরুণ যুগল, চ্যান টং কাই এবং পুন হিউ উইং, হংকং থেকে তাইওয়ানে ছুটি কাটাতে যায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ তাদের মধ্য থেকে শুধু চ্যান ফিরে আসে। ঘটনার এক মাস পর চ্যান স্বীকার করে যে, সে তার অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা পুনকে হত্যা করেছে। তার শাস্তির দাবিতে পুনের পরিবার সোচ্চার হয়ে উঠলেও একটি সমস্যা দেখা দেয়। চ্যানকে শাস্তি দেওয়ার কোনো অধিকার হংকংয়ের ছিল না, কারণ হত্যাকাণ্ড ঘটে তাইওয়ানে। আবার চ্যানকে তাইওয়ানে ফেরত পাঠিয়েও আইনের আওতায় আনা সম্ভব ছিল না, কারণ হংকং এবং তাইওয়ানের মধ্যে কোন এক্সট্রাডিশন বা বহিঃসমর্পণ আইন ছিল না।
২০১৯ সালে হংকং সরকার একটি বহিঃসমর্পণ আইনের প্রস্তাব করে যেখানে হংকং কোনো অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে তাইওয়ানে পাঠাতে পারবে। কিন্তু সমস্যা হলো সেই একই আইন মেইনল্যান্ড চায়নার ক্ষেত্রেও খাটে। কিন্তু চীনের ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থা হংকংয়ের বিচার ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে আশঙ্কা করে হংকং এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
চীন এবং হংকং সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম শাসনব্যবস্থার দুটি দেশ, যারা একটি খুবই জটিল রাজনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ। আর এই এক্সট্রাডিশন বিল চায়নাকে হংকংয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।
যদিও বলা যেতে পারে, হংকং চায়নারই একটি অংশ। এর শুরুটা হয় ১৮০০ শতকের শেষ দিকে যখন চীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকে। চীন হংকংকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হংকং ব্রিটিশ কলোনির অংশ হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে একটি বিশেষ আইনের আওতায় ব্রিটেন চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করে। একে বলা হয়েছিল ‘এক দেশ, দুই নীতি’ আইন। এই আইনে বলা হয় হংকং চীনের অংশ হলেও এতে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার পূর্ণভাবে বজায় থাকবে, যেমন, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, প্রচার স্বাধীনতা ইত্যাদি। যা হংকংকে মেইনল্যান্ড চায়না থেকে পুরোপুরি ভিন্ন করে তোলে। কেননা চীনের বিচার ব্যবস্থায় প্রায়ই যারা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাদের দমন করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবহার করা হয়। সেখানে নাগরিকের কথা বলার অধিকার অনেকটাই রহিত।
২০০৩ সালে, প্রায় পাঁচ লাখ হংকংবাসী একটি আইনের বিরুদ্ধে লড়ে, যেখানে বলা হয় চীনের বিপক্ষে কথা বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৪ সালে লাখো হংকংবাসী তাদের নির্বাচনের ওপর চায়নার প্রভাবের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন আন্দোলনে লেগে থাকে। বর্তমানে হংকংবাসীর এই লড়াই চায়নার বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।