স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপে দলের অবস্থান অষ্টম হওয়ায় সংশয়-সন্দেহের অন্ত ছিল না। কেননা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে আগের এগার বিশ্বকাপে, কোনোবারই প্রথম পর্বে বাদ যাওয়া দলের খেলোয়াড়কে দেয়া হয়নি আসর সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার।
তাই ব্যাটে-বলে সমান আলো ছড়িয়েও, দ্বিধা-সংশয় ছিলো বাংলাদেশ দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার ব্যাপারে। সত্যি হয়েছে সেসব শঙ্কাই। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বে বাদ পড়েও, আসর সেরার পুরষ্কার জেতা হয়নি বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।
তার বদলে পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক ব্যাটিং এবং প্রায় একা হাতে নিজ দলকে রানার আপ করায় আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। যিনি ব্যাট হাতে ২ ফিফটি ও ২ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৭৮ রান।
আর এই আসরে একটি কারণেই সেরার পুরষ্কার দেওয়া হয়নি সাকিবকে। আর সেটি হচ্ছে সাকিবের দলের ব্যার্থতা। দলের ব্যার্থতার কারণেই সাকিবকে দেওয়া হয় না টুর্ণামেন্টে সেরার পুরষ্কার। যদিও উইলিয়ামসন থেকে ব্যাটে-বলে টুর্ণামেন্টে অনেক ভালো খেলেছেন সাকিব। তারপরেও সেরার পুরষ্কার পাওয়া হয় নি সাকিবের।
নকআউট পর্ব তথা সেমিফাইনালে যেতে না পারায় সাকিবের সম্ভাবনা বেশ কমই দেখছিলেন সবাই। বিশেষ করে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মার অতিমানবীয় ব্যাটিং ও অস্ট্রেলিয়ার গতিতারকা মিচেল স্টার্কের রেকর্ডগড়া বোলিংয়ের পর- তাদের যেকোনো একজনের হাতেই পুরষ্কারটি দেখার সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু এ তিনজনের কেউই নন, পুরষ্কারটি জিতে নিয়েছেন কিউই অধিনায়ক।
রোহিত ও স্টার্ক- দুজনের দলই ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলে খুলে যায় সাকিবের দরজা। শুধু সাকিবের নয়, ফাইনালের আগের দিন আইসিসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টসেরা দৌড়ে জানানো হয় ছয়জনের নাম। যেখানে অবধারিতভাবেই সবার ওপরে ছিলেন সাকিব।
এছাড়া কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, পাকিস্তানের বাবর আজম, ভারতের রোহিত শর্মা, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও ইংল্যান্ডের জোফরা আর্চারকে তালিকায় রেখে সবার মাঝে সাসপেন্স ঢুকিয়ে দেয় আইসিসি। শেষপর্যন্ত বাকি সবাইকে পেছনে ফেলে উইলিয়ামসনই জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার।
আসরের প্রথম পর্বে বাদ যাওয়ায় সাকিবের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯ ম্যাচ খেলা সম্ভব ছিলো। এর মধ্যে আবার বৃষ্টিতে ভেসে যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। ফলে ৮ ম্যাচেই যা করার করতে হয়েছে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারকে। এ ৮ ম্যাচের ৮ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছেন তিনি।
২ সেঞ্চুরির সঙ্গে পেয়েছেন ৫ ফিফটির দেখা। এই ৮ ইনিংসে সাকিবের সর্বনিম্ন রান ছিল ৪১। ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক সাকিব বল হাতেও কম যাননি। ৮ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে শিকার করেছেন ১১ উইকেট। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই নয়, দলের তিন জয়েই নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। যে কারণে তার হাতে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার তুলে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি আইসিসিকে।
১৯৯২ সালের আসর থেকে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার দেয়া শুরু করেছে আইসিসি। সে আসরেই নিউজিল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন মার্টিন ক্রো। আর এবার জিতলেন কেন উইলিয়ামসন।
বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার তালিকা
১৯৯২ – মার্টিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড, ৪৫৬ রান)
১৯৯৬ – সনাৎ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা, ২২১ রান ও ৭ উইকেট)
১৯৯৯ – ল্যান্স ক্লুজনার (দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৮১ রান ও ১৭ উইকেট)
২০০৩ – শচিন টেন্ডুলকার (ভারত, ৬৭৩ রান ও ২ উইকেট)
২০০৭ – গ্লেন ম্যাকগ্রাহ (অস্ট্রেলিয়া, ২৬ উইকেট)
২০১১ – যুবরাজ সিং (ভারত, ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট)
২০১৫ – মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া, ২২ উইকেট)
২০১৯ – কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড, ৫৭৮ রান)
আরও পড়ুন: একটি কারণেই টুর্ণামেন্ট সেরার পুরষ্কার দেওয়া হলো না সাকিবকে
আরও পড়ুন: ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল হয়েও যাকে ক্রেডিট দিলেন স্টোকস
আরও পড়ুন: ফাইনালের মাঠে কে এই স্বল্পবসনা নারী?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।